রংপুরে দাদন ব্যবসায়ীর হাতে মারধরের শিকার আলমিনা মেরে ফেলার হুমকিতে দিশেহারা পরিবার
খন্দকার আল মামুন মিলন,সম্পাদক
রংপুর সদর উপজেলার সদ্যপুষ্করিনী ইউনিয়নের রামজীবন মন্ডল পাড়ায় দাদন ব্যবসায়ী নাজমুল ও তার লোকজনের হাতে মারধরের শিকার আলমিনা বেগম ও তার পরিবার ন্যায় বিচার চান! এ ঘটনায় আদালদে মামলা করলে থানা থেকে পুলিশ তদন্ত করে প্রমাণ পান।
সরেজমিনে মামলা ও ঘটনার বিবরনে জানা যায়- রংপুর সদরের রামজীবন মন্ডল পাড়ার কামেলীয়া ও গোলামিয়া পাক দরবার শরীফ এর গদ্দীনশিন ফারুক মিয়ার (৫৫) ছেলে দাদন ব্যবসায়ী নাজমুল হোসেন (২৭) এর কাছ থেকে (লাভের উপর) প্রতি খন্দে অর্থাৎ বছরে ২বার ২৫ মণ করে ধান দেয়ার শর্তে ৭০ হাজার টাকা ধার নেন।
কামেলীয়া ও গোলামিয়া পাক দরবার শরীফ গদ্দীনশিন ফারুক এর আস্তানা |
আলমিনার স্বামী পার্শ্ববর্তী পালিচড়া দোলাপাড়া গ্রামের মিজানুর রহমান(৫০)। সে মোতাবেক গত ৪ বছরে ২শ মণ এরও বেশী ধান লভ্যাংশ হিসেবে দেওয়া হয়। পাশাপাশি ধারকৃত মূল ৭০ হাজার টাকাও দেড় বছর পূর্বে দাদন ব্যবসায়ী নাজমুলকে ফেরৎ দেওয়া হয়। কিন্তু দাদন ব্যবসায়ী নাজমুল আলমিনা ও মিজানুরের কাছ থেকে চক্রবৃদ্ধিহারে আরো ৮ হাজার টাকা (সুধ) লভ্যাংশ দাবী করে বসলে নিরুপায় হয়ে গত দেড় বছরে ৩ ক্ষণের মধ্যে এক ক্ষণ (৮ কুড়ি) ধান দিলেও ২ ক্ষণ বকেয়া পড়ে যায়। এনিয়ে দাদন ব্যবসায়ী নাজমুলের ডাকে এলাকায় সম্প্রতি গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গের উপস্থতিতে এক শালিসি বৈঠকে চলতি আলু মৌসুম শেষে লভ্যাংশের ৮হাজারসহ বকেয়া দুই ক্ষণের ১৬ মণ ধান দেয়ার সিদ্ধান্ত দেয়া হয়।
কিন্তু ঘটনারদিন গত ২০ নভেম্বর ২০২০ ইং রোজ শুক্রবার দুপুর সাড়ে ১২টায় ভুক্তভোগী আলমিনা বেগম তার বাবার বাড়ি রামজীবন মন্ডলপাড়া থেকে তার স্বামীর বাড়ি যাবার প্রাক্কালে একই এলাকার দাদন ব্যবসায়ী নাজমুল(২৭), তার পিতা ফারুক মিয়া(৫০), ভাই নাসির হোসেন(২২) ও তার মা নার্গিস বেগম(৪০) তাদের বাড়ির সামনে আলমিনাকে আটক করে তার স্বামীর কাছ থেকে বকেয়া সুদের টাকা কবে পাবে বলে জিজ্ঞাসা করেন।
এ সময় আলমিনা বেগম তাদের বলেন দেওয়ানিরা যে সময় বেধে দিয়েছেন তার মধ্যে পরিশোধ করা হবে। একথা শুনে দাদন ব্যবসায়ী নাজমুল ও তার বাবা ফারুক মিয়া আলমিনাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজসহ বিভিন্ন ধরনের হুমকী দেওয়া শুরু করলে আলমিনা এর প্রতিবাদ করেন। এতে দাদন ব্যবসায়ী নাজমুল ও তার পরিবারের লোকজন আরো ক্ষিপ্ত হয়ে লাঠি শোঠা ও বিভিন্ন দেশীও অস্ত্র নিয়ে তার উপর মধ্যযুগীয় কায়দায় মার ডাং, শ্লীলতাহানী ও গলায় ওরনা পেচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যার চেষ্টা চালায়। পরে আলমিনা জ্ঞান হারিয়ে মাঠিতে পড়ে যান। এসময় বেগতিক ভাব দেখে দাদন ব্যবসায়ী নাজমুল ও তার লোকজন আলমিনার কাছে থাকা জমিবন্ধকীর টাকা নিয়ে পালিয়ে যান। পরে আশপাশের লোকজন আলমিনাকে উদ্ধার করে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করান।
এদিকে চিকিৎসা শেষে আলমিনার স্বামী মিজানুর রহমান বাদী হয়ে উক্ত ঘটনার বিষয়ে বিজ্ঞ আদালতের মাধ্যমে স্বারক নং ৬৯/২০ তাং ২৯/১১/২০ ইং মূলে ৪ জনকে বিবাদী করে ১১/১২/২০ ইং তারিখে রংপুর সদর কোতয়ালি থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নং-০৩। ধারা- ১৪৩/৩৪১/৩২৩/৩২৫/ ৩২৬/ ৩০৭/৩৭৯/৫০৬ ও ১১৪ পেনাল কোড রুজু করা হয়।
বিচার প্রত্য়াশী ভুক্তভোগী আলমিনার বাবা |
এবিষয়ে রংপুর সদর কোতয়ালি থানার অফিসার্স ইনচার্জ বাবুল কুমার রায় ঘটনাস্থল নিজেই পরিদর্শন করেছেন এবং ঘটনার সত্যতাও পাওয়া গেছে বলে সাংবাদিকদের তিনি নিশ্চিত করেছেন।
এলাকাবাসী সাথে কথা বলে জানা যায়- মামলার ১নং আসামী সাবেক শিবির নেতা জনতা ব্যাংক সৈয়দপুর শাখা অফিসের কেয়ারটেকার ফারুক মিয়াকে ১৫ ডিসেম্বর দিবাগত রাতে পুলিশ আটক করতে সক্ষম হয়। এ ছাড়া ফারুখ মিয়া প্রতিবছর তার বাড়িতে ওয়াজ মাহফিল করে টাকা আয় করেন। এছাড়া ব্যাংকে কেয়ারটেকারের চাকুরী করার কারণে চক্রকারে এলাকায় রমরমাট সুদের ব্যবসা করেন।
উল্লেখ্য দাদন ব্যবসায়ী নাজমুল রংপুর নগরীর নামীদামী ক্যান্টমেন্ট স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের লাইব্রেরিয়ান পদে কর্মরত আছেন। বর্তমানে গ্রেফতার আতংকে তিনিসহ অপর আসামীরা গা ঢাকা দিয়েছেন।
Post a Comment
দুঃখজনক