মিঠাপুকুরে শিক্ষকের মধ্য হাতাহাতি,দুপক্ষের অভিযোগ


রুবেল ইসলাম,মিঠাপুকুর 
রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী  মিঠাপুকুর উপজেলা শাখার আমীর, কাফ্রিখাল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও প্রতিষ্ঠাতা   এবং বরখাস্তকৃত প্রধানশিক্ষক জয়নাল আবেদীন মাস্টার কর্তৃক ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষককে মারপিট ও গলাধাক্কা দিয়ে প্রতিষ্ঠান থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্যকর পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে।

গত সোমবার (১৬ই মে) সকাল সাড়ে ১১ টায়  উপজেলার কাফ্রিখাল ইউনিয়নের মিয়ারহাট নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ঘটনাটি ঘটে। এ সময় প্রতিষ্ঠানের ভারপ্রাপ্ত প্রধানশিক্ষক বাদল মিয়াকে মারধর করে গলাধাক্কা দিয়ে বের করে দেওয়া হয়। বাধা দিতে গিয়ে হামলার শিকার হয় একই প্রতিষ্ঠানের মৌলভী শিক্ষক নুরুজ্জামান হামিদী ও  প্রতিষ্ঠানের পিয়ন আব্দুল্লাহ। 

চিকিৎসাধীন অবস্থায় ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক বাদল মিয়া,পাশে বসে স্ত্রী


ভুক্তভোগী ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বাদল মিয়া জানান- জামায়তে ইসলামীর নাশকতার মামলার কারণে প্রতিষ্ঠানের প্রধানশিক্ষক জয়নাল আবেদীন মাস্টার জেলহাজতে গেলে ম্যানেজিং কমিটি তাকে সাময়িক বহিষ্কার করেন। ইতিপূর্বে প্রতিষ্ঠানে তিন বৎসর ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন কামরুল আলম, পরে তৎকালীন ম্যানেজিং কমিটি ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দেন তাকে। গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বরখাস্তকৃত প্রধান শিক্ষক চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পর প্রতিষ্ঠানে এসে সাময়িক বরখাস্ত তুলে নিয়ে নিজ পদে পূর্ণবহালের জন্য বলেন। গত ১২ তারিখে প্রতিষ্ঠানের এডউক ম্যানেজিং কমিটির মিটিং ডাকলে সেখানে সভাপতি উপস্থিত না থাকায় কোন সিদ্ধান্ত গ্রহীত হয়নি। গত ১৬ তারিখে হঠাৎ করেই অফিস কক্ষে ঢুকে কাফ্রিখাল ইউনিয়নের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান ও মিয়ারহাট নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বরখাস্তকৃত প্রধানশিক্ষক জয়নাল আবেদীন মাস্টার, রওশন আলী ও তার ছোট ভাই সুজন অতর্কিত হামলা করেন। এ হামলায় তার আরো দুজন সহযোগী প্রতিষ্ঠানের মৌলবী শিক্ষক ও কেরানী আহত হয়েছেন বলে অভিযোগ করেন। 

বিষয়টি নিয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিক্ষক জানান- প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান শিক্ষক জয়নাল আবেদীন মাস্টারকে বিভিন্ন মামলার কারণে সাময়িক বরখাস্ত করেন তৎকালীন ম্যানেজিং কমিটি। দীর্ঘ দেড় বছর ধরে তিনি হাইকোর্টের রায় নিয়ে প্রতিষ্ঠানে আসলেও তাকে কোন দায়িত্ব অর্পণ করেন নি বর্তমান ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক।তিনি আরোও বলেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হওয়ার পর থেকেই দুটি নিয়োগ বাবদ  ২২ লক্ষ টাকা নিয়েছেন প্রার্থীর কাছে। প্রতিষ্ঠানে বিন্দুমাত্র উন্নয়ন তো দূরের কথা কিংবা একটি প্রসাব করার বদনাও কিনেননি।নিয়োগ বাণিজ্যের টাকা দিয়ে তিনি নিজের বাড়ি পাকা করেছেন।

মিঠাপুকুর উপজেলা জামায়াতের আমির ও কাফ্রিখাল ইউনিয়ন পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন মাস্টার জানান- বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী দল  করায় বিভিন্ন মামলা হওয়ার কারণে ২০১৪ সালে সাময়িক বরখাস্ত করেন তৎকালীন ম্যানেজিং কমিটি। হাইকোর্টে রিট করার পর ০৬-০৮-২০১৭ সালে প্রতিষ্ঠানে পুর্নবহালের আদেশ পান তিনি। রায়ের পরে সাময়িক বরখাস্ত ও বেতন-ভাতা পুর্নবহালের জন্য ১৬-৮-২০১৭ সালে তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত প্রধান কামরুল আলমের নিকট আবেদন করেন। রাজনৈতিক কারণে তৎকালীন ম্যানেজিং কমিটি তাকে পূর্ণবহাল না করে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দেন বাদল মিয়াকে।১৯-০৭-২০১৮ সালে আবার ০৭-০৬-২০২১সালে পুনরায় পুর্নবহালের জন্য আবেদন করেন। তিন বছর ধরে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের নানাবিধ টালবাহানার কারণে বসতে পারেন নি তিনি। গেল সপ্তাহে প্রতিষ্ঠানে গিয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের সাথে কথা বললে বৃহস্পতিবার ম্যানেজিং কমিটির মিটিং করার কথা বলেন। ম্যানেজিং কমিটির কোনো মিটিংয়ের সভার কোন চিঠি না করেই নতুন করে টালবাহানা করেন।সোমবার সকালে  মিটিং-এর আহ্বানের চিঠি দেখতে চাইলে এবং প্রতিষ্ঠানের আয়-ব্যয়ের হিসাব জানতে চাইলে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বলেন- আপনি হিসাব চাওয়ার কে? তিনি প্রতিষ্ঠান থেকে বের  হওয়ার হুমকি দেন। ঠিক তখনই তিনি তার ঘাড় ধরে প্রতিষ্ঠান থেকে বের করে দেন তিনি। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির কারণে তার বেতনের অর্ধেক অংশ ২০১৫ সালের ৯ মাসসহ ৮ বছরে ৯,৭৭,৫০০(নয় লাখ সাতাত্তর হাজার পাঁচশত)  টাকার বেশি রিফাইন্ড হয়েছে।

প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও কাফ্রিখাল ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি এবং নবনির্বাচিত ইউপি সদস্য ফুয়াদ মন্ডল জানান- প্রতিষ্ঠানে মারামারি সংক্রান্ত বিষয়ে তিনি শুনেছেন তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত তিনি অবগত নন।মিটিং সংক্রান্ত বিষয়ে তিনি মন্তব্য না করলেও রাজনৈতিক ব্যাপার বলে তিনি মন্তব্য করেন।

এ বিষয়ে মিঠাপুকুর থানায় একটি এজাহার দায়ের করেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বাদল মিয়া।