মিঠাপুকুরে উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে রোগীর স্থানে মাদকসেবা ও সিন্ডিকেটের আড্ডাখানা
বেপরোয়া উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে রোগীর স্থানে মাদকসেবা ও সিন্ডিকেটের আড্ডাখানা
রুবেল ইসলাম,রংপুর
রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার বড় বালা উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে কোন চিকিৎসা কার্যক্রম না থাকায় এখন মাদক সিন্ডিকেট ও মাদকসেবীদের আড্ডাখানায় পরিণত হয়েছে। স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসক,সহকারি ও ফার্মাসিস্ট নিয়োগ থাকলেও চলছে না সেবা কার্যক্রম। হাসপাতালের জমি দখল করে গড়ে উঠেছে দোকান ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ফলে নিচিহ্ন হয়েছে হাসাপাতাল। এলাকাবাসীর দাবী দ্রæত এই স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি পুনরায় চালু করা।
বড় বালা উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র |
সরেজমিনে-উপজেলার যমুনাশ^রী নদী তীরবর্তী বড় বালা ইউনিয়নের বড় বালা উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি গ্রামীণ জনগোষ্ঠীকে বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা ,ঔষধ ও পরামর্শ দেওয়ার লক্ষ্যে তৎকালীন সাংসদ শাহ মোঃ সোলায়মান আলম ফকির ১০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালটি ১২ ডিসেম্বর ২০০৩ সালে উদ্বোধন করেন। প্রতিষ্ঠালাভের পর থেকে স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসক,সহকারি ও ফার্মাসিস্ট নিয়োগ থাকলেও হাসপাতালের মূল ফটকে ঝুলছে তালা,ভাঙ্গা জানালার ফাঁক দিয়ে দেখা যায় ময়লা স্তুপ পড়ে আছে জিংকসিন ও ফেন্সিডিলের বোতল।
স্বাস্থ্য কেন্দ্রের ভেতরে পড়ে আছে ফেন্সিডিলের বোতল |
স্থানীয় ২ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা আনছার আলী গোপী জানান-এই হাসপাতালটি প্রতিষ্ঠা করা হয় যাতে এই ইউনিয়নের মানুষকে চিকিৎসা সেবা নেওয়ার জন্য মিঠাপুকুরে যাওয়া না লাগে। বহু প্রতিশ্রæতি দিয়ে এই হাসপাতাল এখানে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। কিন্তু এখানে নেই কোন ডাক্তার! নেই কোন এম্বুলেন্স! কোন ধরণের সুযোগ সুবিধা পায়নি এলাকাবাসী বলে জানায় তিনি।
স্বাস্থ্য কেন্দ্রটির কোন জানালই রাখেননি মাদকসেবীরা |
ছড়ান বাজারের তুলা ব্যবসায়ী বিপ্লব হোসেন ক্ষোপের বসে এই হাসপাতালকে ঘোড়ার ডিমের সাথে তুলনা করেন। তিনি আরও বলেন-এই হাসপাতালের দরজা-জানালা ভাঙ্গা,ঘরের ভেতর ময়লা আর্বজনার স্তপ।মাঝে মাঝে এখানে ডাক্তার আসে তবে তাদের ব্যবহার মাশআল্লাহ্।রোগীদের সাথে খারাপ আচরণ করাই যেন তাদের ধর্ম।এসময় তিনি ডাক্তারদের নিয়ে আরও নানাবিধ মন্তব্য করেন।
স্থানীয় লোকজন আরও বলেন-যদি কোন জরুরী রোগীকে চিকিৎসার জন্য শহরে নিয়ে যাওয়ার পূর্বেই রাস্তায় মারা যাওয়ার ঘটনা অহরহ বলে মন্তব্য করেন এলাকাবাসী।
হাসপাতালের ভেতরে পড়ে আছে জিংসিন ও ফেন্সিডিলের বোতল |
হাসপাতালটি অতি দ্রæত চালু করা এবং দিবারাত্রি ২৪ ঘন্টায় রোগীদের চিকিৎসা সেবার পাশাপাশি দখলদার হাত থেকে দখল কৃত জমি উদ্ধারের তাগিত স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের।স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা নুরুজ্জামান জুয়েল এর সাথে কথা হলে তিনি জানান- এই হাসপাতালটি চালু হলে এই এলাকার প্রায় ২০ হাজার মানুষ চিকিৎসা সেবা পাবে।তিনি আরও বলেন এখানে দিবারাত্রি ২৪ ঘন্টা ডাক্তার থাকার কথা কিন্তু কোন ডাক্তার আসেও না আবার বসেও না তবে মাঝে মাঝে ডাক্তার আসেন। সপ্তাহে ২দিন শনিবার ও বুধবার অফিস খোলা হয় সেখান থেকে কিছু ঔষধ বিতরণ করা হয় তাও সীমিত। পাশাপাশি এই হাসপাতালের কিছু জমি বেদখল করে নানাবিধ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বাড়ি গড়ে তুলেছে কিছু ভূমিদস্যু। তাদের প্রতিহত করে হাসপাতালের ৩৩ শতাংশ জমি উদ্ধার করে হাসপাতালের রুপ প্রদান করতে হবে বলে তিনি দাবী করেন।
স্বাস্থ্য কেন্দ্রের জমি দখল করে গড়ে উঠা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান |
বেদখল জমি উদ্ধারে একাধিকবার উচ্ছেদ করলেও কোন প্রকার কাজে আসছে না এবং রাতের আধারে আবার ঘর তোলেন দখলদাররা বলে মন্তব্য করেছেন স্থানীয় বড় বালা ইউপি চেয়ারম্যান সাহেব আলী সরকার। এসময় তিনি দাবী করেন-থানা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা চাইলে এই সমস্যা সমাধান করতে পারেন ।
আর সুশীল সমাজ ও সচেতন মহলের দাবী- স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি চালু হলে সুবিধা পাবে দিনাজপুর ও রংপুর জেলার তিনটি উপজেলার সাধারণ মানুষ বলে মন্তব্য করেছেন মিঠাপুকুর এতিম উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান ফরিদুল ইসলাম ফরিদ। তিনি আরও বলেন-বড় বালা ইউনিয়ন থেকে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং প্রায় ২৫ কিলোমিটার দুরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। সুতরাং এই অঞ্চলের মানুষদের জন্য চিকিৎসা পাওয়া খুবই দুষ্কর।তাই এই হাসপাতালটিকে নতুন রুপ দিয়ে চালু করা প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।
মিঠাপুকুরের ১৭টি ইউনিয়নের মধ্যে বর্তমানে উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র চালু রয়েছে ১১টিতে আর বাকি ৬টিতে অবকাঠামো না থাকলেও নিয়োগ দেওয়া রয়েছে চিকিৎসক।