রংপুরে চাঞ্চল্যকর শিশু হত্যা মামলার প্রধান আসামী রাজা ২৯ দিন পর গ্রেফতার
রংপুরে চাঞ্চল্যকর শিশু হত্যা মামলার প্রধান আসামী রাজা ২৯ দিন পর গ্রেফতার
রুবেল ইসলাম,রংপুর
রংপুরের মিঠাপুকুরে ধর্ষণের পর চাঞ্চল্যকর শিশু হত্যা মামলার প্রধান আসামী রাজা মিয়া(২৫)কে গ্রেফতার করেছে থানা পুলিশ । এসময় হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত আলামত (ব্লেড, কোদাল, বটি ও রক্তমাখা কাপড়) উদ্ধার করা হয়েছে ।
গত বুধবার (২৬ শে মে) উপজেলার বালুয়া মাসিমপুর ইউনিয়নের  বুজরুক সন্তোষপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৩য় শ্রেণীতে লেখাপড়া করা শিক্ষার্থীকে ধর্ষন করে গলা কেটে হত্যা করে খাটের নিচে পুঁতে রেখে পালিয়ে যায় ঘাতক।
 পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়-  বাদীর জ্যাঠা মুন্নাফ মৃতবরন করায় বাদী ও তাহার পরিবারের অন্যান্য লোকজন মৃত ব্যক্তির দাফন কাফন  করার জন্য ছড়ানে যায় । বাদীর স্ত্রী ও মেয়ে (ভিকটিম) বাড়ীতে ছিল । বাদী তাহার জ্যাঠার দাফন কাফন শেষ করিয়া বেলা অনুমান ০৩.০০ ঘটিকার সময় বাড়ীতে ফিরিয়া আসিলে তাহার স্ত্রী বলে যে,  তাদের মেয়ে ১০/-টাকা নিয়ে বিস্কুট কেনার জন্য বাড়ীর পাশেই বুলবুলের দোকানে যায় । এখন পর্যন্ত বাড়ীতে আসে নাই । তখন বাদী ও তাহার পরিবারের লোকজন শিশু ভিকটিমকে বুলবুলের দোকান সহ বিভিন্ন জায়গায় খোজাখুজি করিতে থাকে ।  ইং-২৭/০৫/২১ তারিখ সকাল অনুমান ০৮.০০ ঘটিকার ০১নং আসামী তার নানা বাড়ীতে না থকায় বাদীর সন্দেহ আরো বেড়ে যায় । তখন বাদী গ্রামের লোকজন সহ রাজা মিয়ার নানী বাড়ীতে খোজাখুজি করাকালে উক্ত বাড়ীর পূর্ব দুয়ারী আধাপাকা ঘরের মেঝেতে কাদা দেখে সবার সন্দেহ বেড়ে যায়। এরপর তারা মিঠাপুকুর থানা পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ঘরের মেঝে খুড়ে ভিকটিমের লাশ উদ্ধার করে।  বাদী রাজা মিয়া ও হালিমা বেগমকে আসামী করে মামলা দায়ের করেন। মামলা নং-৬০, তারিখ-২৭.০৫.২০২১ ইং, ধারা-৩০২/২০১/৩৪ দন্ড বিধি। উক্ত ঘরে অবস্থানকারী  তার নানী হালিমা বেগম কে ঘটনার দিনই পুলিশ গ্রেফতার করে। 
 উক্ত মামলার প্রধান আসামী রাজা মিয়া নিজেকে রক্ষায় আত্মগোপন করেন । অবশেষে মিঠাপুকুর থানা পুলিশের একটি চৌকশ দল মোবাইল ট্রাকিংয়ের মাধ্যমে গতকাল বিকাল  চারটায়   ফরিদপুর নগরকান্দা থানাধীন তালমার মোড় এলাকায় অভিযান পরিচালনা  করে তাকে  গ্রেফতার করেন। 
গ্রেফতারকৃত আসামীকে প্রাথমিকভাবে  জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যে পুলিশ জানায় - রংপুর জেলার মিঠাপুকুর উপজেলার বালুয়া মাসিমপুর ইউনিয়নের বুজরক সন্তোষপুর গ্রামের শামিম মিয়ার পুত্র  রাজা মিয়া (২৫) ।  ছোট বয়স থেকেই সে নানীর বাড়িতে বড় হয়েছে। সে বিভিন্ন জায়গায় রুটি ফ্যাক্টরিতে কাজ করত।  ঘটনার দিন রাজা মিয়ার নানার নিজ ভাই মারা গেলে সবাই ছড়ান এলাকায় লাশ দাফনে যায়। কিন্তু রাজা মিয়া ,তার  মামাতো বোন রহিমা ও মামী  তার একমাত্র দুই মাসের বাচ্চা নিয়ে বাড়িতে ছিল।রহিমাদের বাড়ি ও রাজা মিয়ার নানা বাড়ি পাশাপাশি।  দুপুর ১২ টার দিকে রহিমা তার মায়ের কাছ থেকে ১০/- টাকা নিয়ে বাড়ির পাশের দোকানে বিস্কুট কিনতে যায়। পথের মধ্যে রাজা মিয়ার সাথে দেখা হলে রাজা মিয়া তাকে আরও ১০ টাকা দিয়ে বিস্কুট আনতে বলে।  এরপর বিস্কুট নিয়ে  রাজা মিয়ার কাছে আসলে রাজা মিয়া তাকে নিয়ে তার ঘরে যায়। 
এরপরে রাজা ঘরের দরজা বন্ধ করে দিয়ে তার  পড়নের কাপড় খুলে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে ধর্ষণের চেষ্টা করে। ভিকটিম চিৎকার দিতে শুরু করলে রাজা তার গলা টিপে ধরে।  এতে ভিকটিমের শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে যায়। এরপর ভিক্টিমের মৃত্য নিশ্চিত করার জন্য সে ব্লেড দিয়ে তার গলা কাটে। এরপর কোদাল ও বটি দিয়ে ঘরের মধ্যে গর্ত করে লাশ গর্তের মধ্যে পুতে ফেলে উক্ত গর্ত পানি দিয়ে লেপে দিয়ে তার উপর  ধানের বস্তা রেখে দেয়। হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত কোদাল পাশের বাসাতে, বটি বেডের নিচে এবং রক্ত মোছার কাজে ব্যবহৃত কাথা ও লুঙ্গি পাশের পুকুরে পুতে রাখে। এরপর সে হত্যাকান্ড আড়াল করার জন্য সবার সাথে ভিকটিমকে খুজতে থাকে।  ঘটনার দিন রাত সাড়ে এগারোটার দিকে সে বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়।
গ্রেফতারের পর তার দেয়া তথ্য অনুসারে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত ব্লেড তার ঘরে লাশ গুমের জন্য খননকৃত  গর্ত থেকে, বটি তার ঘরের বেডের নিচ থেকে, কোদাল পাশের মাহবুল এর বাড়ি থেকে এবং মেঝের রক্ত মোছার কাজে ব্যবহৃত লুঙ্গি ও কাঁথা পাশের বাড়ির পুকুর থেকে উদ্ধার করা হয়।
ডি-সার্কেল সিনিয়র এএসপি কামরুজ্জামান জানান- গ্রেফতারকৃত আসামী সেচ্ছায় দোষ স্বীকার করে স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি প্রদানে আগ্রহ প্রকাশ করায় তার জবানবন্দি রেকর্ডের জন্য বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।









